২০২০ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে, একটি টেস্ট এবং তিনটি টি-টোয়েন্টির জন্য পাকিস্তান সফর করে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। কিন্তু মাঠে পারফরম্যান্স দেখতে ব্যর্থ হয় টাইগাররা। তবে একই সময়ে, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল দক্ষিণ আফ্রিকায় আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে জয় তুলে নেয়।
এটি বিশ্বকাপ পর্যায়ে কোনো খেলার ফাইনালে বাংলাদেশের প্রথম জয় ছিল। বছরটি এভাবে শুরু হলেও, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের আগ্রাসনে পরবর্তী দু'মাসের মধ্যে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন আসে সবকিছুতে।
উইন্ডিজদের দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে হতাশ বাশার
দক্ষিণ আফ্রিকায় জয়ের উচ্ছ্বাস
অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল দক্ষিণ আফ্রিকায় ইতিহাস গড়ার আগে বাংলাদেশ কোনো খেলায় এর আগে বিশ্বকাপ জিতেনি। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এবং কোনো ম্যাচে পরাজিত না হয়ে শিরোপা ছিনিয়ে নেয় জুনিয়র টাইগাররা।
উদ্বোধনী ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৯ উইকেটে হারিয়ে টুর্নামেন্টে নিজেদের যাত্রা শুরু এবং দ্বিতীয় খেলায় স্কটল্যান্ডকে সাত উইকেটে হারায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল। খারাপ আবহাওয়ার কারণে কোনো ফলাফল ছাড়াই শেষ হয় পাকিস্তানের বিপক্ষে থাকা তৃতীয় ম্যাচ।
জুনিয়র টাইগাররা অবশ্য স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউজিল্যান্ডকে কোয়ার্টার-ফাইনাল এবং সেমি-ফাইনালে যথাক্রমে ১০৪ রান এবং ছয় উইকেটে পরাজিত করে। ফাইনালে, ভারতকে ডিএল পদ্ধতিতে তিন উইকেটে হারিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা অর্জন করে বাংলাদেশ।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের এই সংস্করণে ব্যতিক্রমীভাবে দুর্দান্ত পারফম্যান্স দেখান মাহমুদুল হাসান জয়, তানজিদ হাসান, শাহাদাত হোসেন, আকবর আলী, রকিবুল হাসান ও শরিফুল ইসলাম।
আইসিসির দশক সেরা ওয়ানডে দলে সাকিব
পাকিস্তানে হতাশা
ক্রিকেটে বাংলাদেশের হতাশার এ বছরটি শুরু হয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে। এটি ছিল ১২ বছরের মধ্যে পাকিস্তানে বাংলাদেশ দলের প্রথম সফর। দীর্ঘ আলোচনার পর সিরিজটি তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়।
প্রথম পর্যায়ে, তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে মুখোমুখি হয় উভয় দেশ। এতে ২-০ ব্যবধানে জয় পায় পাকিস্তান এবং শেষ ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়।
জানুয়ারিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজের পরে, গত ফেব্রুয়ারিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে পাকিস্তান সফরে যায় বাংলাদেশ দল। সেই টেস্ট ম্যাচেও পরাজিত হয় টাইগাররা। বাকি টেস্ট ও একটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে গত এপ্রিলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফরের কথা থাকলেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সিরিজের সেই অংশ স্থগিত করতে বাধ্য হয় উভয় পক্ষ।
পাকিস্তান সফরের দ্বিতীয় পর্বের পরপরই জিম্বাবুয়েকে একটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে এবং দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ।
টেস্ট ফরম্যাটে মুশফিকুর রহিমের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডের মধ্য দিয়ে টেস্ট ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় পায় বাংলাদেশ। ওই সিরিজের অন্যান্য ম্যাচগুলোতেও জয় পায় টাইগাররা।
সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে লিটন দাস ১৬টি চার ও আট ছক্কার সাহায্যে ১৪৩ বলে করেন ১৭৬ রান, যা ওয়ানডেতে কোনো বাংলাদেশি খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড। রেকর্ডটি তৈরির পথে লিটন ছাড়িয়ে যান তার উদ্বোধনী সঙ্গী তামিম ইকবালকেও যিনি সেই ম্যাচে করেন ১২৮ রান।
একই ম্যাচে আরও একটি রেকর্ড গড়েন লিটন-তামিম জুটি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওই ম্যাচের উদ্বোধনী জুটিতে ২৯২ রান তুলে নেন তারা।
বঙ্গবন্ধু টি২০ কাপে তরুণদের জ্বলে ওঠায় উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখছেন বিসিবি প্রধান
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় খেলাধুলা
মার্চ মাসে, অন্যান্য ক্রীড়া ইভেন্টের পাশাপাশি, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সব ধরনের ক্রিকেটও বন্ধ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের পরে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা প্রস্তুতি নেন ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্ট ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের জন্য। তবে দেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে প্রথম ছয়টি ম্যাচের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য টুর্নামেন্টটি স্থগিত করা হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে এ নিয়ে কিছু আলোচনা হলেও, টুর্নামেন্টটি পুনরায় আর শুরু করা সম্ভব হয়নি।
সেপ্টেম্বরের আগে পর্যন্ত ক্রিকেটের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে মাসব্যাপী লকডাউন শেষে ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেন বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়।
পরে একটি পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে টাইগারদের শ্রীলঙ্কা সফরের কথা থাকলেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আবারও মারাত্মক আকার ধারণ করায় সিরিজটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়।
ক্রিকেটারদের ফিটনেসে জোর নির্বাচকদের
পিছিয়ে যায় বাংলাদেশের অনেক ম্যাচ
শ্রীলঙ্কা সিরিজ ছাড়াও কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের অন্তত ১১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ পিছিয়ে যায়। এর মধ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ওয়ানডে ও একটি টেস্ট, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে এবং চারটি টি-টোয়েন্টি এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠে দুটি টেস্ট ম্যাচ রয়েছে।
এই ম্যাচগুলোর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও স্থগিত হওয়া ম্যাচগুলো ভবিষ্যতে খেলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলোকে রাজ করানোর কথা জানিয়েছে বিসিবি। তবে এখনো এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
মাঠে ফিরে আসা ক্রিকেট
শ্রীলঙ্কা সিরিজ স্থগিত হওয়ার পর ঘরোয়া ক্রিকেটকে মাঠে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে মনোনিবেশ করে বিসিবি। নভেম্বরে দেশের শীর্ষ ক্রিকেটারদের তিনটি দলে বিভক্ত করে আয়োজন করা হয় প্রেসিডেন্টস কাপের।
করোনা সংক্রমণ রোধে এ টুর্নামেন্টে খেলোয়াড়, কোচ, সংশ্লিষ্ট কর্মী এবং অন্যান্য যারা এটি আয়োজনের সাথে জড়িত ছিলেন তাদের জন্য কঠোর স্বাস্থ্য সতর্কতার বলয় তৈরি করে বিসিবি।
প্রেসিডেন্টস কাপ আয়োজনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিসিবি এরপর আয়োজন করে চলতি বছরের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট আসর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ ২০২০।
এ টুর্নামেন্টকে চলতি বছরের বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য একমাত্র ইতিবাচক বিষয় হিসেবে দেখছেন অনেকে। কারণ বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে অংশ নেয়া সব ক্রিকেটারই ছিলেন বাংলাদেশি এবং প্রতিভাবান স্থানীয় খেলোয়াড়রা পেয়েছিলেন এ ফরম্যাটে নিজেদের প্রমাণ করার সুবর্ণ সুযোগ।
বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের সময় ক্রিকেটার এবং অন্য কর্মীদের জন্য বিসিবি কেমন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছিল তা তদারকি করতে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।
ঢাকা এবং চট্টগ্রামে সংক্ষিপ্ত সফর শেষে তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ এবং পরে বাংলাদেশে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
করোনার প্রভাবে ক্রিকেটের অপ্রত্যাশিত বছর ২০২০
আশার আলো
২০২১ সালে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কোভিড-১৯ বিরতির পর এটি বিবেচিত হবে বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টকে হিসাবে।
ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সফরের জন্য দল ঘোষণা করলেও, বিশ্বব্যাপী বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সেখানে থাকছেন না দলটির শীর্ষ কয়েকজন খেলোয়াড়।